অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : আল কায়েদা জঙ্গি সন্দেহে এবার পশ্চিমবঙ্গে এক কলেজ ছাত্রকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার মথুরাপুরের বাসিন্দা মনউদ্দিন খান ওরফে মনিরুদ্দিন নামে ওই ছাত্রকে গ্রেফতার করে কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)। এসটিএফের দাবি, ভারতীয় আল কায়েদার জঙ্গি সন্দেহে গ্রেফতার হওয়া শিক্ষক আজিজুল হককে জেরা করেই ওঠে আসে মনিরুদ্দিনের নাম।
গ্রেফতারকৃত কলেজ ছাত্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ, জঙ্গি সংগঠনের নেতাদের হাতে ওই ছাত্র তুলে দিয়েছিল নিজের পরিচয়পত্র ও নথি। ওই পরিচয়পত্রের সাহায্যে জঙ্গিদের সিমকার্ড ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট তৈরি করা হয়। এছাড়া সোশাল মিডিয়ায় আল কায়েদার প্রচার ও স্লিপার সেল তৈরিতে ওই ছাত্র জঙ্গি নেতাদের সাহায্য করত বলে অভিযোগ এসটিএফের।
বাংলাদেশে ব্লগার খুনের অভিযুক্ত ফয়জলকে গ্রেফতার করে কলকাতাসহ সারা দেশজুড়ে আল কায়েদার নেটওয়ার্ক সম্পর্কে তথ্য পান লালবাজারের গোয়েন্দারা। তাকে জেরা করে উত্তরপ্রদেশ থেকে গ্রেফতার করা হয় হাসনতকে। যার মালদহের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় একটি পেন ড্রাইভ। আল কায়েদা যে দেশের বেশ কয়েকজন ভিআইপিকে খুন ও কয়েকটি শহরে বিস্ফোরণের ছক কষেছে, সেই প্রমাণ মিলেছে ওই পেন ড্রাইভ থেকে। এই ব্যাপারে ভোপালের জেল থেকে আরও দুই জঙ্গিকে কলকাতায় নিয়ে আসা হয়। তাদের কাছ থেকেই মথুরাপুরের বাসিন্দা আজিজুল হকের সন্ধান মেলে।
অভিযোগ, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় আল কায়েদা স্লিপার সেল তৈরির কাজ শুরু করেছিল। সেই কাজেই যুক্ত রয়েছে আজিজুল। বাংলাদেশ থেকে আসা জঙ্গিদের ভুয়া পরিচয়পত্র, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট তৈরি থেকে শুরু করে আজিজুল তাদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করত বলে অভিযোগ। সেই সূত্র ধরে দক্ষিণ ২৪ পরগনায় আল কায়েদা নতুন মডিউল তৈরির ছক কষে।
এসটিএফের সূত্র জানিয়েছে, আজিজুল মথুরাপুর অঞ্চলে মূলত আরবি ভাষা পড়াত। তার কাছে বালক-বালিকারাই পড়তে যেত। এছাড়া এলাকার কয়েকজন তরুণ ছাত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করে আজিজুল। তাদেরও ভাষা শিক্ষা দিতে শুরু করে সে। মথুরাপুরের রানাঘাটা গ্রামের বাসিন্দা মনিরুউদ্দিন খানের সঙ্গে গত বছর যোগাযোগ করে আজিজুল। দক্ষিণ বারাসতের একটি কলেজের ইতিহাসের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র মনিরুদ্দিনকে নিজের বাড়িতে ডেকে পড়াতে শুরু করে সে। পেশায় গুঁড়ো চালের ব্যবসায়ী মনিরুদ্দিনের বাবা মজফ্ফর খান দাবি করেছেন, ছেলে শিক্ষকের কাছে পড়তে যেত বলে তারা কেউ বারণ করেননি। কিন্তু প্রায় সাত মাস ধরে আজিজুলের সঙ্গে তার ছেলের যোগাযোগ ছিল না।
এসটিএফের কর্মকর্তাদের মতে, ভারতীয় আল কায়েদা বিভিন্নভাবে নেটওয়ার্ক তৈরি করছে কলকাতা ও আশপাশে। আজিজুলের মতো শিক্ষকদের বাংলাদেশ আল কায়েদার নেতারা এসে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে ও মগজধোলাই করছে। আবার আজিজুলের মতো শিক্ষকরা তার ছাত্রদের মগজধোলাই করছে। মৌখিকভাবে নাশকতার প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে। কীভাবে বিস্ফোরক তৈরি করতে হয়, সেই সংক্রান্ত নথিও তুলে দেওয়া হচ্ছে ওই ছাত্রদের হাতে।
প্রতিবেশীদের দাবি, এলাকায় ভালো ছেলে হিসেবে পরিচিত ছিল মনিরুদ্দিন। সবার সঙ্গে হেসে খেলেই কথা বলত সে। কীভাবে এহেন কু-সঙ্গের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে তা বুঝতে পারছেন না কেউই।
Leave a Reply